আমূল বদল শিক্ষা
ব্যবস্থায়
৩৪ বছর পর ফের ‘পরিবর্তন’। তিন দশকের
পুরনো শিক্ষা ব্যবস্থার খোলনলচে বদলে ফেলল মোদি সরকার। বুধবার কেন্দ্রীয়
মন্ত্রিসভার বৈঠকে পাশ হল নয়া জাতীয় শিক্ষানীতি। অনেকটা প্রথম বিশ্বের দেশগুলির
মডেলেই তা তৈরি করা হয়েছে। স্কুলশিক্ষার কাঠামো বদল, মাতৃভাষায় শিক্ষা,
বোর্ড পরীক্ষার গুরুত্ব হ্রাস, উচ্চশিক্ষায়
ইচ্ছে মতো ভর্তি ও বেরিয়ে আসার সুবিধা এবং একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা তৈরি—এই নয়া
জাতীয় শিক্ষানীতির উল্লেখযোগ্য দিক। মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের নামও বদলে হল
শিক্ষামন্ত্রক। গত বছরই ইসরোর প্রাক্তন প্রধান কে কস্তুরীরঙ্গনের নেতৃত্বাধীন
বিশেষজ্ঞ কমিটির নয়া শিক্ষানীতির খসড়া প্রকাশ করেছিল। মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী
রমেশ পোখরিয়াল জানিয়েছেন, ‘এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
পদক্ষেপ। গত ৩৪ বছরে শিক্ষানীতিতে কোনও পরিবর্তন হয়নি।’
এর প্রধান দিকগুলি হল—মাতৃভাষায় শিক্ষায় জোর: পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত মাতৃভাষা তথা আঞ্চলিক ভাষায় পঠনপাঠন বাধ্যতামূলক। স্কুল চাইলে তা অষ্টম শ্রেণী বা তার পরেও চালাতে পারে। প্রতিটি স্তরেই সংস্কৃত পড়ানো হবে। সেকেন্ডারি স্তরে বিদেশি ভাষা শিক্ষাও বাধ্যতামূলক। যদিও শিক্ষানীতিতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, পড়ুয়াদের উপর কোনও ভাষা চাপিয়ে দেওয়া হবে না।
শিক্ষার অধিকার: ২০২৫-এর মধ্যে দেশে তিন থেকে ছ’বছর বয়সি শিশুদের প্রত্যেকের প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। ২০৩৫ সালের মধ্যে স্কুল থেকে উচ্চশিক্ষায় ভর্তি বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করা হবে।
বোর্ড পরীক্ষার ব্যবস্থা বদল: নতুন কাঠামো হবে ৫+৩+৩+৪ বিন্যাসে। শুধু তৃতীয়, পঞ্চম এবং অষ্টম শ্রেণীতে পরীক্ষা হবে। অন্য শ্রেণীতে পরীক্ষা হবে পারদর্শিতা নির্ভর। ফলে মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিকের মতো বোর্ড পরীক্ষার গুরুত্ব কমছে। সব কোর্স দু’টি ভাষায় করার সুবিধা থাকবে। ব্যবহারিক জ্ঞানের প্রয়োগে গুরুত্ব দেওয়া হবে বোর্ড পরীক্ষায়। প্রতিটি বিষয়ে আলাদা আলাদা করে সংক্ষিপ্ত এবং বর্ণনামূলক প্রশ্নে পরীক্ষা হবে। বোর্ড পরীক্ষা বছরে একবারের পরিবর্তে দু’বার নেওয়া হতে পারে।
মূল্যায়নের পদ্ধতি বদল: দক্ষতা বৃদ্ধিতে জোর দেওয়া হবে। সেই অনুযায়ী পরীক্ষা হবে। রেজাল্টের সময় পড়ুয়া নিজে, সহপাঠী এবং শিক্ষকরা মূল্যায়ন করবেন। জোর দেওয়া হবে কৃত্রিম মেধা (এআই) ভিত্তিক মূল্যায়নে। শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে জোর দেওয়া হবে। মাপকাঠি নির্ধারণের জন্য গড়া হবে ন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্ট সেন্টার (PARAKH)
ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে কোডিং: ষষ্ঠ শ্রেণী থেকেই শুরু হবে ভোকেশনাল বিষয় শিক্ষা। ২০২৫ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ পড়ুয়াকে ভোকেশনাল বিষয়ের সঙ্গে পরিচয় করানো হবে। একুশ শতকের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে কোডিং শেখানো শুরু হবে ষষ্ঠ শ্রেণী থেকেই। অন্তত দু’বছর কাঠের কাজ, মৃৎশিল্প, বাগান করা, বৈদ্যুতিন সামগ্রী মেরামতি, অঙ্কন ইত্যাদি ক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধি করা হবে। ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে অন্তত ১০ দিন ব্যাগহীন পিরিয়ডে এই ভোকেশনাল ট্রেনিংয়ের ইন্টার্নশিপও দেওয়া হবে। দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত এই ইন্টার্নশিপ করা যাবে।
বিজ্ঞান, বাণিজ্য, কলা বিভাগের অবসান: একাদশ-দ্বাদশে বড় বদল আসছে। পদার্থবিদ্যার সঙ্গে ফ্যাশন টেকনোলজি পড়া যাবে, বা অঙ্কের সঙ্গে গান।
এমফিলের অবসান: স্নাতকোত্তরে গবেষণা করতে চাইলে চার বছরের ডিগ্রি কোর্সের পর সরাসরি পিএইচডি করা যাবে। এমফিল বলে কিছু থাকবে না।
একটি প্রবেশিকা: উচ্চশিক্ষায় কলেজে ভর্তির জন্য থাকবে একটি প্রবেশিকা পরীক্ষা। ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি তা নেবে। তবে পরীক্ষাটি হবে ঐচ্ছিক।
কলেজগুলিকে স্বশাসন ও একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা: কলেজগুলিকে দেওয়া হবে স্বশাসন। কলেজের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতেই তা মিলবে। এ প্লাস, এ, বি—এই তিন ক্যাটিগরি হবে। তাছাড়া ইউজিসি, এআইসিটিইর মতো একাধিক নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে এক ছাতার তলায় এনে তৈরি হবে একটি নতুন কমিশন বা পর্ষদ। বাদ রাখা হবে আইন ও ডাক্তারি।
ন্যাশনাল রিসার্চ ফাউন্ডেশন: গুরুত্বপূর্ণ গবেষণায় অনুদানের জন্য হচ্ছে এই ফাউন্ডেশন। শুধু বিজ্ঞান নয়, সমাজবিজ্ঞানও এর আওতায় থাকবে। ১০০টি বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় ভারতে তাদের ক্যাম্পাস খুলবে।
এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানতে হলে নীচের ভিডিওতে ক্লিক করুন
0 Comments