পিএফের ন্যূনতম জীবনবিমা বেড়ে ৩ লক্ষ


পিএফের ন্যূনতম জীবনবিমা বেড়ে ৩ লক্ষ
নিয়মে বদল, টানা ১২ মাস এক সংস্থায় কাজ না করলেও মিলবে টাকা


কর্মরত অবস্থায় মৃত কর্মীর পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা দেওয়ার নিয়মে আমূল পরিবর্তন করল ইপিএফও। এবার থেকে কর্মরত অবস্থায় মৃত কর্মী যদি মৃত্যুর আগে একটানা ১২ মাস কোনও একটি নির্দিষ্ট সংস্থায় কাজ নাও করেন, তাহলেও তাঁর পরিবার আর্থিক সহায়তা পাবে। এক্ষেত্রে একমাত্র বিচার্য হবে, ওই কর্মী জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ইপিএফের আওতায় ছিলেন কি না। কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রকের আওতাধীন কর্মচারী ভবিষ্যনিধি সংগঠনের (ইপিএফও) সাম্প্রতিক অছি পরিষদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট আর্থিক সহযোগিতার পরিমাণ হবে ন্যূনতম তিন লক্ষ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ছ’লক্ষ টাকা। আর্থিক সহায়তার ন্যূনতম পরিমাণ আড়াই লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে তিন লক্ষ করেছে কেন্দ্র। জানা যাচ্ছে, ১৯৭৬ সালের ইডিএলআই (এমপ্লয়িজ ডিপোজিট লিঙ্কড ইনসিওরেন্স) স্কিমের নিয়মে সংশোধন ঘটিয়ে এই পরিবর্তন করেছে কেন্দ্রীয় সরকার।




ইডিএলআই স্কিম মূলত কর্মচারী প্রভিডেন্ট ফান্ডের (ইপিএফ) গ্রাহকদের জন্য একটি জীবনবিমা পরিষেবা। যদিও এই পরিষেবা পাওয়ার জন্য একজন গ্রাহককে আলাদা করে কোনও প্রদেয় অর্থ (কন্ট্রিবিউশন) জমা দিতে হয় না। তিনি যে সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন, তার কর্তৃপক্ষ ওই গ্রাহকের হয়ে ইডিএলআই স্কিমে ০.৫ শতাংশ (কর্মী পিছু সর্বোচ্চ ৭৫ টাকা প্রতি মাসে) অর্থ ‘কন্ট্রিবিউট’ করেন। এক্ষেত্রে একজন ইপিএফ গ্রাহক যেমন প্রতি মাসে তাঁর মূল বেতন (বেসিক স্যালারি) এবং মহার্ঘভাতার (ডিএ) ১২ শতাংশ অর্থ ইপিএফ খাতে জমা দেন, ইডিএলআই স্কিমের জন্য তাতে কোনও পরিবর্তন ঘটে না। এতদিন নিয়ম ছিল, ইপিএফের আওতাভুক্ত একজন শ্রমিক বা কর্মচারী যদি কর্মরত অবস্থায় মারা যান, তাহলে তাঁর পরিবারের সদস্যদের (নমিনি) আর্থিক সহযোগিতা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রথমে খতিয়ে দেখতে হবে, ওই কর্মী মৃত্যুর আগে ১২ মাস একটানা কোনও একটিই নির্দিষ্ট সংস্থায় কাজ করেছেন কি না। নাকি তিনি শেষ ১২ মাস একাধিকবার তাঁর সংস্থা পরিবর্তন করেছেন? যদি দেখা যেত, উল্লিখিত সময়ে সংশ্লিষ্ট কর্মী একাধিকবার সংস্থা পরিবর্তন করেছেন, তাহলে তাঁর পরিবারের সদস্যরা ইডিএলআই স্কিমের আওতায় ওই অর্থ পেতেন না। যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই অসন্তোষ দানা বাঁধছিল ইপিএফ গ্রাহকদের মধ্যে। তার জেরেই শেষমেশ কেন্দ্র উল্লিখিত নিয়মে পরিবর্তন ঘটাল বলে মনে করা হচ্ছে। ঠিক হয়েছে, পরিবর্তিত নিয়মে কর্মরত অবস্থায় কোনও কর্মীর মৃত্যু হলে তিনি কতবার সংস্থা পাল্টেছেন, তা তাঁর পরিবারের আর্থিক সহযোগিতা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।




কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রকের শীর্ষ সূত্রে জানা যাচ্ছে, প্রাথমিকভাবে ইডিএলআই স্কিমে আর্থিক সহযোগিতার পরিমাণ ন্যূনতম আড়াই লক্ষ টাকা প্রদানের ক্ষেত্রে বছরে প্রায় ৩৮৬ কোটি টাকার বাজেট ধার্য করা রয়েছে। দেখা যাচ্ছে, ২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে ৬ হাজার ৪৭৯টি ক্ষেত্রে ন্যূনতম আড়াই লক্ষ টাকা করে দিতে হয়েছে। যার জন্য খরচ হয়েছে মোট ১৬২ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রায় ৩৮৬ কোটি টাকার বাজেট ধার্য থাকলেও ইডিএলআই স্কিমে প্রতি বছর খরচ হচ্ছে গড়ে প্রায় ৮১ কোটি টাকা। নিয়মের বেড়াজালে আটকে বেশিরভাগ অর্থই শ্রমমন্ত্রকের হাতে থেকে যাচ্ছে। তাই কর্মীদের কর্মরত অবস্থায় মৃত্যুর পরে তাঁদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে কেন্দ্র ওই নিয়ম কিছুটা শিথিল করার পথেই হেঁটেছে। 

এই বিষয়টি যদি আপনি সরাসরি দেখতে চান তাহলে নীচে দেওয়া ভিডিওতে ক্লিক করুন ও ভালো লাগলে আমাদের চ্যানেলটিকে সাবস্ক্রাইব করে নিন।

Post a Comment

0 Comments