এপ্রিল থেকে রেশনে
বিনামূল্যে চাল ও গম, প্রক্রিয়া শুরু
মুখ্যমন্ত্রী
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা মতো আগামী এপ্রিল মাস থেকে রেশনে বিনা পয়সায় চাল ও
গম দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেল। লকডাউনের মধ্যেই শুক্রবার থেকে রেশন ডিলার ও ডিস্ট্রিবিউটররা এই সংক্রান্ত কাজ শুরু করে
দিয়েছেন। খাদ্য দপ্তরের নির্দেশিকা অনুযায়ী তাঁদের অবশ্য আগের মতো আগাম টাকা জমা
দিয়ে খাদ্যসামগ্রী তুলতে হচ্ছে। খাদ্য দপ্তর জানিয়ে দিয়েছে, ডিলার ও ডিস্ট্রিবিউটরদের পরে বিল জমা দিয়ে
তাদের কমিশন ও পরিবহণ খরচ নিতে হবে।
খাদ্য দপ্তরের প্রধান সচিব মনোজ আগরওয়ালের জারি করা নির্দেশিকায় আগামী এক মাসের
বরাদ্দ খাদ্যশস্য একসঙ্গে তুলে নিতেও বলা হয়েছে। খাদ্য দপ্তরের নির্দেশিকায় বলা
হয়েছে, করোনার পরিপ্রেক্ষিতে আগামী সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত
রাজ্যের ৭ কোটি ৮৮ লক্ষ রেশন গ্রাহক বিনা পয়সায় চাল ও গম পাবেন। কোন কোন শ্রেণীর
গ্রাহকরা এই সুবিধা পাবেন সেটাও উল্লেখ করা হয়েছে এই নির্দেশিকায়। জাতীয় খাদ্য
সুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় থাকা অন্ত্যোদয়, এসপিএইচএইচ, পিএইচএইচ এবং রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পের
(এক নম্বর) গ্ৰাহকরা সমপরিমাণে চাল ও গম পাবেন বিনামূল্যে।
উল্লেখ্য, অন্ত্যোদয়
ছাড়া অন্যরা মাসে মাথাপিছু পাঁচ কেজি করে চাল ও গম পান রেশনে। অন্ত্যোদয়ের ক্ষেত্রে পরিবারপিছু মাসে ৩৫ কেজি
করে খাদ্য শস্য দেওয়া হয়। নির্দেশিকায় আরও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, রাজ্য সরকারের দুই
নম্বর খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পের গ্রাহকরা আগের মতোই মাথাপিছু ১ কেজি করে চাল ও গম
পাবেন। এই শ্রেণীর গ্রাহকদের অবশ্য আগের মতোই ১৩ টাকা কেজি দরে চাল ও ৯ টাকা কেজি
দরে গম নিতে হবে। প্রসঙ্গত, রাজ্যে এই দুই নম্বর প্রকল্পের
রেশন গ্রাহকের সংখ্যা এখন প্রায় ১ কোটি ৪৫ লক্ষ। গত পুজোর পর থেকে দুই পর্যায়ে
বিশেষ শিবিরে আবেদনপত্র নিয়ে যে নতুন রেশন কার্ডগুলি দেওয়া হয়েছে ও দেওয়ার
প্রক্রিয়া চলছে সেগুলি সবই রাজ্য সরকারের এক নম্বর খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পের
কার্ড। ফলে ওই নতুন কার্ড প্রাপকরা সবাই বিনা পয়সায় খাদ্যশস্য পাওয়ার সুবিধা
পাবেন।
অল
ইন্ডিয়া ফেয়ারপ্রাইস শপ ডিলার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসু
জানিয়েছেন, বিনা পয়সায় যে চাল-গম
গ্রাহকদের দেওয়া হবে, সেটা তাঁদের আগাম টাকা জমা দিয়ে
তুলতে হচ্ছে। সাধারণ মানুষের স্বার্থে তাঁরা এটা মেনে নিয়েছেন। তবে কমিশন ও
পরিবহণ খরচ যাতে ডিলাররা তাড়াতাড়ি পেয়ে যান, সেটাও
সরকারকে দেখতে হবে। খাদ্যসামগ্রী মজুত করার জায়গার সমস্যা থাকায় মাসে দুই দফায়
বরাদ্দ তোলা সুবিধা হবে, এটা দপ্তরকে জানানো হয়েছে।
ওয়েস্টবেঙ্গল এম আর ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নিখিলেশ ঘোষ
জানিয়েছেন, বিভিন্ন জায়গায় গ্রাহকরা মার্চ মাসেই বিনা
পয়সায় চাল-গম চাইছেন। কয়েক জায়গায় ডিলারদের উপর হামলাও হয়েছে বলে তাঁর
অভিযোগ। আগামী ছয় মাস এই প্রকল্পটি চালাতে রাজ্য সরকারের অতিরিক্ত ৬৯৭ কোটি টাকা
খরচ হওয়ার কথা। তবে কেন্দ্রীয় সরকার আগামী তিন মাস দেশের প্রায় ৮০ কোটি
গ্রাহকের জন্য বিনা পয়সায় চাল-গম সরবরাহ করার ঘোষণা করেছে। জাতীয় প্রকল্পের আওতায়
থাকা রাজ্যের প্রায় ৬ কোটি রেশন
গ্রাহক এর আওতায় পড়বেন বলে মনে করা হচ্ছে। এতে রাজ্য সরকারের আর্থিক বোঝা বেশ কিছুটা কমবে।
রাজ্য
খাদ্য দপ্তরের প্রধান সচিব সরকারি
প্রকল্পটিকে সফল করার জন্য জেলাশাসকদের বিশেষ নজরদারি রাখতে লিখিত নির্দেশ
দিয়েছেন। লকডাউন পরিস্থিতির মধ্যে খাদ্য সরবরাহর কাজ করতে যাতে কোনও সমস্যা না
হয়, তার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মী, লরি
চালক, শ্রমিকদের জন্য বিশেষ পাশ ইস্যু করতে খাদ্য দপ্তরের
জেলার আধিকারিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে রেশন দোকানে হাত
ধোয়া সহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশ জারি হয়েছে। রেশন ডিলারদের সংগঠন তার সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছে, রেশন তোলার সময় লাইনে যেন গ্রাহকরা নির্দিষ্ট
দূরত্ব রেখে দাঁড়ান সেটা নিশ্চিত করতে হবে।