সাইক্লোনে কি করণীয়
- টালির
বাড়ি হলে, হাল্কা ভাবে লাগানো টালি সিমেন্ট দিয়ে শক্ত ভাবে লাগান। ঘরের জানালা দরজা ভাঙা থাকলে,
সারিয়ে নিন।
- ঘরের
চারিদিক ভালো ভাবে লক্ষ্য রাখুন। মরা ও শুকিয়ে যাওয়া গাছের ডাল বা গাছ সরিয়ে ফেলুন। সাইনবোর্ড, টিনের
শিট, কাঠের গুড়ি, ময়লা ফেলার ধাতব পাত্র ও আলগা ইঁটের মত জিনিষ ভাল
ভাবে বেঁধে রাখুন।
- কাঁচের
জানালার পিছনে শক্ত কাঠের বোর্ড আটকে দিন।
- অন্যথায়
কাঁচের জানালার সাথে কাগজের শিট আঁঠা দিয়ে আটকে দিন। এতে কাঁচ ভাঙলেও তা চারিদিকে ঠিকরে
কাউকে আহত করবে না।
- হারিকিনে
যথেষ্ট পরিমানে কেরোশিন ভরে রাখুন। টর্চ ও ব্যাটারি হাতের কাছে তৈরী রাখুন।
- পরিত্যক্ত
ও জীর্ণ বাড়ি সত্তর ভেঙে ফেলুন।
- রেডিও
সেট এবং ট্রানজিস্টার থাকলে তা কার্যকরী অবস্থায় রাখুন। অতিরিক্ত ব্যাটারির যোগান রাখুন।
- নিয়মিত
রেডিওতে নিকটবর্তী অল ইন্ডিয়া রেডিওর আবহাওয়ার সতর্কীকরণ বুলেটিন ও উপদেশ শুনুন । অন্যকে
আপনার প্রাপ্ত তথ্য পৌঁছে দিন।
- কেবলমাত্র
সরকারী দপ্তর থেকে প্রাপ্ত সংবাদই প্রচার করুন।
- সমুদ্রতটবর্তী
নিচু অঞ্চল বা অন্য কোন নিচু অঞ্চল যা জলোচ্ছাষে প্লাবিত হতে পারে, সেসব জায়গা
তাড়াতাড়ি পরিত্যাগ করুন। প্লাবন আসার যথেষ্ট সময় আগেই নিরাপদ আশ্রয়ে
চলে যান। দেরী করে বোকা বানবেন ন।
- যদি আপনার
বাড়ি নিচু অঞ্চলে না হয় আর শক্ত-পোক্ত হয়, তবে আপনার বাড়ি এমন অবস্থায় নিরাপদ। কিন্তু
প্রয়োজনে সরকার উপদেশ মেনে দেরী না করে আপনার ঘরও পরিত্যাগ করুন।
- প্রবল
বর্ষনে নদীর প্লাবনের ফলে যে সব জায়গায় বন্যা পরিস্থিতি হতে পারে, সেসব জায়গায় অথিরিক্ত সতর্ক
থাকুন।
- অতিরিক্ত খাবার বিশেষতঃ শুকনো খাবার এবং অল্প প্রস্তুতিতে তৈরী করা যায় এমন খাবারের যথেষ্ট যোগান রাখুন।
- আপনি
যদি আক্রান্ত জায়গায় অবস্থান করেন, তবে আপনার গুরূত্বপূর্ন জিনিষ ক্ষতির হাত থেকে বঁচাতে
উপরের তলায় রাখুন।
- কেরোশিনের
টিন, ধাতব পাত্র, কৃষিকার্যে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, রাস্তায় ব্যবহৃত ধাতব পাত নির্মীত রোড
সাইন ঈত্যাদি জিনিষ, যা কিনা প্রবল ঝড়ে প্রানঘাতী হতে পারে, সেগুলো আগে
থেকে খুলে কোন বদ্ধ ঘরে বন্ধ রাখুন।
- যেদিক
থেকে প্রবল হাওয়া বইছে, তার উল্টো দিকের জানলা বা দরজা খুলে রাখার ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন।
- শিশু
ও বয়স্কদের প্রয়োজনীয় বিশেষ খাদ্যের যোগান রাখুন।
- যদি সাইক্লোনের
কেন্দ্রবিন্দু আপনার এলাকার উপর দিয়ে যায়, তবে এই কেন্দ্রবিন্দু চলে যাওয়ার পর ক্ষনিকের
জন্য (আধ ঘন্টা বা তারও বেশী) ঝড়-বৃষ্টি বন্ধ থাকবে। এটি খুব
গুরূত্বপূর্ণ সময়। এ-সময়ে যথা সম্ভব সতর্ক থাকুন ও আপতকালিন মেরামত
করে নিন। মনে রাখবেন অচিরেই উল্টো দিক থেকে আরও ধংসাত্মক ঝড় আসতে
চলেছে।
- শান্ত
থাকুন। আপনার বিপর্যয় মোকাবিলার ক্ষমতা অন্যকে সাহস ও সাহায্য দেবে।
- যতক্ষন
না পর্য্যন্ত উপযুক্ত কতৃপক্ষ থেকে আশ্বস্থ্ হচ্ছেন, ঘরে না ফিরে নিরাপদ আশ্রয়েই থাকুন।
- লাইটপোষ্ট
থেকে ঝুলন্ত তার এড়িয়ে চলুন।
- সাহায্যের
প্রয়োজন ছাাড়া আক্রান্ত এলাকা এড়িয়ে চলুন।
- দুষ্কৃতিদের
দুঃষ্কর্ম প্রতিরোধ করুন। প্রয়োজনে পুলিশের সাহায্য নন।
- লরি,
বাস, গাড়ি ইত্যাদি সাবধানে চালান।
- বাসস্থানের
আশেপাশের ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করুন।
- উপযুক্ত
কতৃপক্ষকে আপনার ক্ষয়-ক্ষতির কথা জানান।
- আক্রান্ত এলাকায় থাকা ব্যক্তির সুরক্ষার কথা অতি সত্তর ওনার আত্মীয়দের জানান।
কি করবেন না
- গুজবে
কান দিয়ে ভূল পথে চালিত হবেন না।
- উদ্ধারকারী
দল না বললে নিরাপদ আশ্রয় ছাড়বেন না।
- সাইক্লোন
বয়ে যাওয়ার সময় ক্ষনিকের নিরবতার সময় ভূলেও নিরাপদ আশ্রয় ছাড়বেন না। যদিও এ-সময়ে
আপতকালিন মেরামত করে নিতে পরেন।
- লাইটপোষ্ট থেকে ঝুলন্ত তার স্পর্শ করবেন না। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হতে পারেন।
সাইক্লোনে কৃষিক্ষেত্রে কি করণীয়
কৃষিক্ষেত্রে সাইক্লোনের সাথে জড়িত ভারী বৃষ্টিপাত ও ঝড়ের
প্রভাব
ভারী বৃষ্টিপাত ও বন্যার প্রভাব
- ভারী
বৃষ্টিপাত ও বন্যা মাঠের ফসলের চূড়ান্ত ক্ষতি করতে পারে।
- বন্যা
জমির অবায়ুজীবী দশার সৃষ্টি করতে পারে, যা ফসলের ক্ষতি করতে পারে।
- অবায়ুজীবী
মাটিতে ঘটা রসায়নিক বিক্রিয়া নাইট্রেট লবনের মাত্রা কমিয়ে নাইট্রোজেন গ্যাস সৃষ্টি করে।
নাইট্রোজেন বিমুক্তিকরণের ফলে জমির উর্বরতা শক্তি ব্যাপক হারে কমে
যায়।
- ভারী
বৃষ্টিপাতের ফলে জমির ক্ষয়, জমিতে জল জমা, গুরুত্বপূর্ন কৃষিকর্মের ব্যাহত হওয়া, ফসলে কীটপতঙ্গ ও
রোগের প্রাদূর্ভাব দেখা দেবার মত ঘটনা ঘটে।
ঝড়ের প্রভাব
- ঝড়ের
ফলে ফসলের বিকৃতি তথা উৎপাটন হতে পারে।
- ঝড়ের
ফলে পরিপক্ক ফসল থেকে শষ্যদানা ঝড়ে পড়তে পারে।
- আখ, কলা
জাতীয় লম্বা ধরনের গাছ ঝড়ে বিশেষ ভাবে সংবেদনশীল।
- সার ও
কীটনাশক ছড়ানোর মত কৃষিকর্ম ঝড়ের প্রভাবে ব্যাহত হয়।
- ঝড়ের
ফলে কৃষি জমিতে আদ্রতার ঘাটতি হতে পারে। ফলে ফসলের জলের প্রয়োজনীয়তা বেড়ে যায়।
সাইক্লোনের পূর্বে করণীয়
- আশি শতাংশ
বা তার বেশী পরিপক্ক ফসল কেটে নিন।
- কাটা
ফসল সুরক্ষিত স্থানে সঞ্চিত রাখুন।
- সম্ভ্যাব্য
আক্রান্ত জায়গার সেচ খাল ও বাঁধ মেরামত করে রাখুন।
- সম্ভ্যাব্য
যে স্থানে সাইক্লোন ভূমি স্পর্শ করবে, সেই স্থানের ব্যাপক জলনিকাশী ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করুন।
- ফুল চাষের
ক্ষেত্রে গাছের দৃঢ় অবলম্বনের ব্যবস্থা করুন যাতে ঝড়ে গাছ উপড়ে না যায়।
- যে স্থান
জলমগ্ন হতে পারে সেইসব স্থানে ধান জাতীয় ফসলের (যা জমা জলেও ঠিক থাকতে পারে) চাষ করতে
পারেন।
- বন্যা
মোকাবিলায় ফলপ্রসূ হবে এমন জলাধারের (নদী, হ্রদ, বড় জলাশয়) ব্যবস্থা করতে হবে।
- যে সব
ফসল চাষে বেশী জল লাগে এবং যে সব ফসল জলপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে, সে সব ফসল চাষে বন্যার জন্য
ক্ষতির পরিমান কমে।
- আখ গাছ
ভালো ভাবে বেঁধে রাখুন।
- পশু খামারের
জন্য মজবুত ছাদ তৈরী করতে হবে যা ঝড়ে স্থিতিশীল থাকতে পারে।
- পশুদের
জন্য সঠিক চালা দেওয়া জায়গার ব্যবস্থা করুন।
- মুরগী
খামারের চারদিক ভাল ভাবে বস্তা দিয়ে ঢেকে দিন।
সাইক্লোনের পরে করণীয়
- সাইক্লোন
চলে যাওয়ার পর জমিতে জমা অতিরিক্ত জল বের করে দিন। আখ ও কলা গাছ ভালো ভাবে বেঁধে রাখুন,
যাতে করে তা দৃঢ় থাকে। সব্জি ও ফল গাছের জন্য দৃঢ় অবলম্বনের ব্যবস্থা
করুন। এতে ক্ষতির পরিমান কমবে।
- অতিরিক্ত
নাইট্রোজেন সহযোগে জমিতে মাটি চাপা দিন এবং পাতায় স্প্রে করুন। এতে ক্ষতির পরিমান কমবে।
- জলমগ্ন
অবস্থার জন্য ফসলের অনুখাদ্যের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এজন্য সাইক্লোন চলে যাওয়ার পর পরই অনুখাদ্য
পাতায় স্প্রে করুন।
- পাকা
ফসল কেটে ফেলুন এবং যান্ত্রিক পদ্ধতিতে ফসল শুকনো করুন।
কি করবেন না
- সার ও
কীটনাশক ছড়ানোর কাজ করবেন না।
- কাটা
ফসল খোলা মাঠে রাখবেন না।
- মৎস্যজীবীরা
সমূদ্রে পাড়ি দেবেন না।
- পশুদের
বাইরে চড়তে পাঠাবেন না।
- খামারে
বা গাছের তলায় থাকবেন না।
0 Comments