৮ লক্ষ যুবক-যুবতীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজের সুযোগ
করে দিচ্ছে কেন্দ্রের এই প্রকল্প
দেশের ৭১৭টি জেলায় আট লক্ষ
যুবক-যুবতীকে প্রশিক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে শুরু হয়েছে ‘প্রধানমন্ত্রী কৌশল
বিকাশ যোজনা ৩.০’।
প্রধানমন্ত্রী
কৌশল বিকাশ যোজনা (PMKVY) ভারত সরকারের একটি প্রকল্প, যা ২০১৫ সালের জুলাই মাসে
চালু হয়েছিল। এই স্কিমের উদ্দেশ্য হল অল্প শিক্ষিত বা যাঁরা মাঝপথে স্কুল
ছেড়েছেন, তাঁদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া।
এই স্কিমটি তিন মাস, ছ’মাস এবং এক বছরের জন্য
রেজিস্ট্রেশন করা হয়। কোর্স শেষ করার পরে একটি শংসাপত্র দেওয়া হয়, যা পুরো দেশে
স্বীকৃতি পায়।
প্রধানমন্ত্রীর কৌশল বিকাশ যোজনার আওতায় ২০২২ সালের
মধ্যে দেশে প্রায় ৪০ কোটি যুবক-যুবতীকে প্রশিক্ষণের দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ
করা হয়েছে। প্রশিক্ষণের পরে স্ব-কর্মসংস্থানের জন্য ঋণ পাওয়ারও সুবিধা রয়েছে।
পিএমকেভিওয়াই
(PMKVY) ৩.০ কী?
এই প্রকল্পের তৃতীয় পর্ব শুরু হয়েছে। PMKVY ৩.০ (২০২০-২১)-এ আট লক্ষ যুবকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। যার জন্য ব্যয় হবে ৯৪৮.৯০ কোটি টাকা। দক্ষতা উন্নয়ন ও উদ্যোক্তা মন্ত্রকের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২ টি রাজ্য এবং আটটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৭১৭ জেলায় PMKVY ৩.০ শুরু করা হয়েছে।
রেজিস্ট্রেশন কী ভাবে করাবেন?
(১) প্রধানমন্ত্রীর কৌশল বিকাশ যোজনা
(পিএমকেভিওয়াই)-র সুবিধা নিতে আবেদনকারীকে নিজের নাম রেজিস্ট্রেশন করাতে হবে। এর
জন্য PMKVY এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে এ গিয়ে আপনার নাম, ঠিকানা
এবং ইমেল তথ্য পূরণ করতে হবে।
(২) আবেদনপত্র পূরণ করার পরে আপনি যে কোর্সে
প্রশিক্ষণ নিতে চান, তা বেছে নিতে হবে।
(৩) পিএমকেভিওয়াই ৪০টি টেকনিক্যাল কোর্স যেমন কনস্ট্রাকশন, ইলেকট্রনিক্স এবং হার্ডওয়্যার,
ফুড প্রসেসিং, ফার্নিচার এবং ফিটিং, হ্যান্ডিক্র্যাফট, রত্ন ও জুয়েলারি এবং
চামড়া প্রযুক্তি-সহ তালিকাভুক্ত যে কোনো একটি কোর্স বেছে নিতে হবে।
(৪) এই তথ্য পূরণ করার পরে, একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
নির্বাচন করতে হবে।
এক নজরে দেখা যাক PMKVY কি?
(১) এই প্রকল্পে প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য কোনো ফি বা টাকা
দিতে হয় না।
(২) সরকারি ভাবে প্রায় ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত পুরস্কার
রয়েছে।
(৩) এখানে ৩ মাস, ৬ মাস এবং এক বছরের জন্য
রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ রয়েছে।
(৪) কোর্স শেষ করার পর সার্টিফিকেট দেওয়া হবে। এই
শংসাপত্রটি পুরো দেশে মান্যতা পায়।
(৫) প্রশিক্ষণের পরে, সরকার আর্থিক সহায়তা দেওয়ার
পাশাপাশি চাকরি পেতেও সহায়তা করে।
প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনা প্রকল্প ৩ (২০২০-২১) খুব শীঘ্রই চালু
দক্ষতা উন্নয়ন ও শিল্পোদ্যোগ মন্ত্রক ২০২০ সালে যেসব গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-
১) জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন পর্ষদ বা ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি
চলতি বছরের ১ আগস্ট ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর ভোকেশনাল ট্রেনিং-এর সাথে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
২) এন সি ভি টি পুরস্কার সংস্থা ও
মূল্যায়ন সংস্থার নির্দেশিকাগুলি চূড়ান্ত করে এবং তা চালু করে। একইভাবে একটি
অনন্য সনাক্তকরণ যোগ্য শংসাপত্র চূড়ান্ত করা হয়।
৩) জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন পর্ষদের কার্যনির্বাহী কমিটির চতুর্থ বৈঠকে
প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনা সহ বিভিন্ন বিষয়ে পর্যালোচনা করা হয়।
৪) প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনা প্রকল্প-৩ এর (২০২০-২১) জন্য অনুমোদন পাওয়া গেছে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর এক্সপেন্ডিচার ফিন্যান্স
কমিটির বৈঠকে এই প্রকল্পে ৮ লক্ষ শিক্ষার্থীকে অন্তর্ভুক্ত করে প্রশিক্ষণ দেওয়ার
কথা বলা হয়েছে। এজন্য ৯৪৮. ৯০ টাকা ব্যয় করা হবে।
৫) উমঙ্গ- এই ক্ষেত্র বা প্লাটফর্ম ব্যবহার করে প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ
যোজনায় নাম নথিভূক্ত করা সহ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের নাম ও এ বিষয়ে যাবতীয় তথ্য
পাওয়া যাবে।
৬) এ আই টি টির ক্রাফটসম্যান পরীক্ষার জন্য গত ২৩ নভেম্বর ১৪.৫ লক্ষ হল
টিকিট বিতরণ করা হয়েছে।
৭) অল ইন্ডিয়া ট্রেড টেস্টের প্রথম ও দ্বিতীয় ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপ্ত
হয়েছে।
৮) ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট বা আইটিআই গুলিতে এবছর অনলাইন
ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেখানে মোট ১.৩৯ লক্ষ ছাত্র ছাত্রী অংশ নিয়েছে। এ
পর্যন্ত ২৮৫৮ টি অনলাইন ক্লাস হয়েছে।
৯) সারাদেশে ৩৩ টি জাতীয় দক্ষতা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বা ন্যাশনাল স্কিল
ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে ওয়েবসাইট এর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
১০) আইটিআই গুলিতে প্রশিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে ডিজিটাল
প্ল্যাটফর্মের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
১১) শিক্ষার্থীদের জন্য অ্যাপ্রেনটিসশিপের ব্যবস্থা করতে রাজ্য গুলিকে
পৃথকভাবে জানানো হয়েছে।
১২) দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্কিল স্ট্রেনদেনিং ফর ইন্ডাস্ট্রিয়াল ভ্যালু
এনহেন্সমেন্ট বা স্ট্রাইভ কর্মসূচি গ্রহণ করে আইটিআই গুলিকে ত্রিপাক্ষিক চুক্তির আওতায়
আনা হয়েছে। এ পর্যন্ত দেশে ২৪৪টি আইটিআই এই কর্মসূচির আওতায় এসেছে।
এর পাশাপাশি ৩২ টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল স্ট্রাইভ চালুর লক্ষ্যে
চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
১৩) সংকল্প বা স্কিলস অ্যাকুইজিশন এন্ড নলেজ অ্যাওয়ারনেস ফর লাইভলিহুড
প্রমোশন প্রোর্টালের সূচনা করা হয়েছে।
১৪) জেলা পর্যায়ে ডিস্ট্রিক্ট স্কিল ডেভেলপমেন্ট প্ল্যানিং এর ক্ষেত্রে
অনলাইন ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়েছে।
১৫) ব্যাঙ্গালোরের আই আই এম এর সঙ্গে যৌথভাবে মহাত্মা গান্ধী ন্যাশনাল
ফেলোশিপ স্কিম চলতি বছরের ৮ মার্চ চালু করা হয়েছে। এই ফেলোশিপের অধীনে ৭৪ জনকে
নির্বাচিত করা হয়েছে।
১৬) স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে প্রস্তুতি
চলছে।
১৭) দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে
অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
১৮) পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য দক্ষতা অনুযায়ী কাজের ক্ষেত্রে বিভিন্ন
পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
১৯) স্বাস্থ্য ক্ষেত্রেও পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ করে
দেওয়া হয়েছে।
২০) চলতি বছরের ২০ আগস্ট কেন্দ্রীয় জাহাজ মন্ত্রকের সঙ্গে দক্ষতা উন্নয়ন
ও শিল্পোদ্যোগ মন্ত্রকের একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। যেখানে বন্দর এলাকা ও নৌ ক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধির কথা উল্লেখিত হয়।
২১) বিভিন্ন সংস্থা যেমন বেঙ্গালুরুর টয়োটা কিরলোস্কার মোটরস, নয়ডার
সহর্ষ ইলেকট্রনিক্স, লাভা ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, উত্তরপ্রদেশের মারুতি পেপার
লিমিটেডের সঙ্গে সহজ চুক্তি স্বাক্ষরিত।
২২) আইআইএস মুম্বাইয়ের সঙ্গে গত ১১ নভেম্বর একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
২৩) দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে শংসাপত্রের অধিকারী দক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে
অ্যাসেম- নামে একটি পোর্টাল চালু করা হয়েছে। যে পোর্টাল মারফত ডিসেম্বর পর্যন্ত
১.৩ কোটি দক্ষ ব্যক্তি যুক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ১৪ লক্ষের কর্মসংস্থানের
সুযোগ হয়েছে।
২৪) আইবিএম, মাইক্রোসফ্ট, সিম্প্লগ লার্ন সহ অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরি
বোর্ডের সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রে চুক্তি স্বাক্ষরিত।
২৫) কোভিড জনিত অতিমারি পরিস্থিতিতে আইটিআই সহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে
অস্হায়ীভাবে আইসোলেশান, কোয়ারেন্টাইন বা চিকিৎসা কেন্দ্রের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
২৬) আনলকের চতুর্থ পর্যায়ে চারটি রাজ্যে প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনায়
পুনরায় প্রশিক্ষণ শুরু করা সম্ভব হয়েছে।
২৭) চলতি বছরের ১০ সেপ্টেম্বর মন্ত্রকের পক্ষ থেকে কৌশল্যাচার্য
পুরস্কার-২০২০ প্রদান করা হয়েছে। পাঁচটি বিভাগে মোট ৯২ জন শিক্ষক ও প্রশিক্ষক
পুরস্কৃত হয়েছেন।
২৮) মন্ত্রকের পক্ষ থেকে বিশ্ব যুব দিবস ও স্বচ্ছতা পক্ষ উদযাপন করা
হয়েছে।
২৯) রাজভাষা পুরস্কার-২০২০। যেখানে মোট ছটি বিভাগে ৩০ জনকে পুরস্কৃত করা
হয়েছে।
৩০) অনলাইন পরীক্ষার প্রস্তুতি হিসাবে এন আই এম আই- নামে একটি এন্ড্রয়েড
মোবাইল অ্যাপ চালু করা হয়েছে। এই অ্যাপে এ পর্যন্ত ২,৬৪,৫১২ জন প্রশিক্ষক ও
শিক্ষার্থী নাম নথিভুক্ত করেছেন।
0 Comments