স্বাস্থ্যসাথীর রোগী ফেরালে বেসরকারি হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিল



স্বাস্থ্যসাথীর রোগী ফেরালে বেসরকারি
হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিল
তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চরম হুঁশিয়ারি মুখ্যমন্ত্রীর


স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের কার্ড থাকা সত্ত্বেও তালিকাভুক্ত যে সমস্ত বেসরকারি নার্সিংহোম এবং হাসপাতাল রোগী ফেরাবে, তাদের লাইসেন্স বাতিল করার মতো সিদ্ধান্ত নিতে রাজ্য সরকার পিছপা হবে না। বৃহস্পতিবার দুর্গাপুরে পশ্চিম বর্ধমান জেলার প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠকের মঞ্চ থেকে এভাবেই স্পষ্ট বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের স্বাস্থ্য পরিষেবা সুনিশ্চিত করতেই স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প চালু করা হয়েছে। রাজ্যের সাড়ে সাত কোটি মানুষকে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দেওয়া হয়েছে। মঞ্চ থেকে মমতার হুঁশিয়ারি, সেই কার্ডধারী কাউকে যদি কোনও তালিকাভুক্ত বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোম প্রত্যাখ্যান করে, তার লাইসেন্স বাতিল করা হবে। করা হবে না রিনিউ। শুধু তাই নয়, প্রত্যাখ্যাত ব্যক্তিকে মমতার নিদান, ভর্তি করতে না চাইলে, সোজা থানায় চলে যান। সেখানে অভিযোগ জানান। অভিযোগ জানান বিডিও অফিসে। সেখান থেকে তা পৌঁছে যাবে স্বাস্থ্যদপ্তরে। যে সমস্ত বেসরকারি হাসপাতাল এবং নার্সিংহোম রোগী প্রত্যাখ্যান করবে, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দপ্তরের প্রধান সচিব বিবেক কুমারকে নির্দেশও দেন মুখ্যমন্ত্রী।


স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের কার্ড থাকা সত্ত্বেও ফেরানো হচ্ছে রোগী, প্রশাসনিক বৈঠকে এই বিষয়টি উত্থাপিত হওয়া মাত্রই দৃশ্যত ক্ষুব্ধ মমতা বলেন, গরিব মানুষকে স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে কোনওভাবেই বঞ্চিত করা যাবে না। তাছাড়া ওরা (বেসরকারি হাসপাতাল) কোনও দয়াদাক্ষিণ্য করছে না। বিনা পয়সায় চিকিৎসা দিচ্ছে, এমনটাও নয়। চড়া স্বরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করতে বেসরকারি হাসপাতালগুলির সঙ্গে চুক্তি করে ১২০০ কোটি টাকা স্বাস্থ্যবিমা বাবদ খরচ করেছে রাজ্য সরকার। এত টাকা খরচ করার পর যদি কেউ রোগী ফেরায়, তাহলে কড়া ব্যবস্থা তো নিতেই হবে। ক্ষোভ উগরে মমতা বলেন, কোটা নির্দিষ্ট করে গরিব মানুষকে চিকিৎসা দেওয়ার কথা ছিল বেসরকারি হাসপাতালের। সেটা ওরা করে না। তাঁর স্পষ্ট বার্তা, এবার রোগী ফেরানোর মতো ঔদ্ধত্য যেন কেউ না দেখায়। প্রসঙ্গত, গত ২০১৭ সালের পয়লা ফেব্রুয়ারি মুখ্যমন্ত্রী সাধারণ মানুষের জন্য চালু করেছিলেন স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প। রাজ্যের সমস্ত সরকারি হাসপাতালের সঙ্গে ১৫০০ বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। কিন্তু নানা অজুহাত দেখিয়ে বেসরকারি হাসপাতালগুলি রোগী ফেরাচ্ছে বলে বিস্তর অভিযোগ আসছে। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, চালু হওয়ার দিন থেকে আজ পর্যন্ত স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের ওয়েবসাইটে, কল সেন্টার এবং পোর্টাল মারফত বেসরকারি হাসপাতাল থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন, এমন চার হাজার অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। স্বাস্থ্যদপ্তরের হস্তক্ষেপে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রোগী ভর্তি করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়েছে। কয়েকদিন আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুরের একটি নার্সিংহোম স্বাস্থ্যসাথীর কার্ডধারী এক ব্যক্তিকে ভর্তি না করে ফিরিয়ে দেয়। নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের যুক্তি ছিল, বকেয়া সরকারি বিল তারা পায়নি। নবান্নের ওই সূত্রটি জানিয়েছে, এরপর স্বাস্থ্যদপ্তর ওই নার্সিংহোমের বকেয়া বিলের বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখে, ইতিমধ্যেই তা মেটানো হয়েছে। বিষয়টি জানানো হয় নার্সিংহোমকে। তারাও খোঁজ নিয়ে সঠিক বিষয়টি জানতে পেরে স্বাস্থ্যদপ্তরের কাছে ক্ষমা চেয়ে সংশ্লিষ্ট কার্ডধারী ব্যক্তিকে ভর্তি করে নেয়। স্বাস্থ্যদপ্তরের প্রধান সচিব বলেন, রোগী প্রত্যাখ্যান করার কারণে এখনও পর্যন্ত কোনও বেসরকারি হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিল হয়নি। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর এই কড়া অবস্থানের পর এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।


প্রশাসনিক বৈঠকে এদিন পুলিসের কাজকর্ম নিয়েও সরব হন মুখ্যমন্ত্রী। শান্তিরক্ষকদের তাঁর নির্দেশ, সবার সব অভিযোগ থানায় নিতে হবে। অভিযোগ সত্যি কি না, তা যাচাই করেই ব্যবস্থা নিন। সাধারণ মানুষের অভিযোগ নিতেই হবে। মমতার নিদান, কেস ডায়েরিটা (সিডি) ঠিকঠাক করে লিখবেন। বহু সময় দেখা যাচ্ছে, সিডি ঠিকঠাক না হওয়ায়, অপরাধী জামিন পেয়ে যাচ্ছে। এটা যেন না হয়। পুলিসের পাশাপাশি সরকারি আইনজীবীদের মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ একটা পক্ষ হয়ে থাকতে হবে। সরকার আপনাদের পয়সা দেয়। সরকারের মামলাগুলো ভালো করে দেখুন , ঝুলিয়ে রাখবেন না। নিষ্পত্তি করার ব্যবস্থা করুন।


এই বিষয়টি যদি আপনি সরাসরি দেখতে চান তাহলে নীচে দেওয়া ভিডিওতে ক্লিক করুন ও ভালো লাগলে আমাদের চ্যানেলটিকে সাবস্ক্রাইব করে নিন।





Post a Comment

0 Comments